নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী পল্লী হিসেবে খ্যাত নয়ামাটি, উকিলপাড়া ও দেওভোগ কাঠের পুলে ঈদের কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অথচ ঈদ আসলেই হোসিয়ারী পল্লীতে সকাল সন্ধ্যা ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম থাকতো। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। হোসিয়ারী পল্লীর দোকানগুলোতে মাল বোঝাই থাকলেও ক্রেতার দেখা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে অর্থনৈতিক মন্দা ও ঢাকার বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের ফলে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী পল্লীগুলোতে। সরেজমিনে ঘুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি, দেওভোগ মার্কেট ও উকিলপাড়ার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এমনটা জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই পোশাকের বিক্রি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের ফলে প্রচুর পোশাক এখনো মজুদ রয়ে গেছে হোসিয়ারী ব্যবসায়ীদের।
নয়ামাটির এক হোসিয়ারী ব্যবসায়ী বলেন, দেশের মানুষ এখন প্রথমে খাবার, বাসা ভাড়া ও অন্য খরচ জোগার করছে, পরবর্তীতে পোশাকের কথা ভাবছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই তারা এখন নতুন পোশাক আগের মতো কিনছে না। আর যেহেতু আমরা নতুন পোশাকের ব্যবসা করি তাই আমাদের বিক্রি অনেক কমে গেছে।
নয়ামাটির আরেক হোসিয়ারী ব্যবসায়ী বলেন, আমি মূলত মফস্বল এলাকার বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করি। নতুন ব্যবসা দিয়েছি। প্রথমে এসেই করোনার ধাক্কা খেয়েছি। এরপর থেকে এখানো চেষ্টা করছি ঘুরে দাঁড়াতে। কিন্তু পারছি না। এবছর ভেবেছিলাম একটু ব্যবসা ভালো হবে। অথচ কি কারণে জানি বিক্রি কমে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না। আমার পার্টিরা বলছে, তাদের বেচাকেনা ভালো হচ্ছে না। তাই তারাও কম কম মাল কিনছেন আমার কাছ থেকে।
শহরের ২নং রেলগেটের দেওভোগ মার্কেটের আল-মুজিব গার্মেন্টসের পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, আমাদের বেচাকেনা আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এরমধ্যে আবার বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো। বঙ্গবাজারে আমার প্রায় ৩০ জন পার্টি আছে। ঈদকে কেন্দ্র করে এদের জন্য আগে থেকেই প্রচুর পরিমাণে পোশাক তৈরি করে রেখেছিলাম আমরা। তাদের দোকান যদি আগুনে না পুড়তো তাহলে মজুদ করা এই মালগুলো এতোদিনে শেষ হয়ে যেতো। কিন্তু এখন আর তা বিক্রি হবে না। এছাড়া বঙ্গবাজারে আমাদের অনেক বকেয়া থাকায় সবমিলিয়ে একটু কষ্টেই আছি আমরা।
উকিলপাড়ার ব্যবসায়ী সাব্বির বলেন, এবার ঈদের জন্য আমি ১ হাজার ডজন দামি মাল তৈরি করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৫শ’ ডজনও বিক্রি করতে পারিনি। এরমধ্যে আবার বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা করে ২শ’ ডজন মাল তৈরি করছিলাম। ওনাদের দোকান আগুনে পুড়ে যাওয়াতে সেই মালগুলো আটকা পড়ে গেল। এখন আমরা পুরাই বেকায়দায় পড়ে গেলাম। তবে আমার কোনো বাকি নেই মার্কেটে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।